চট্টগ্রামের মীরসরাই, হাটহাজারী ও ফটিকছড়িতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। ধীরে পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে বাড়ি-ঘর, জমি ও সড়কের ক্ষত স্পষ্ট হচ্ছে।
এসব এলাকায় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে অব্যাহত রয়েছে ত্রাণ সহায়তা।
সড়ক ডুবে যাওয়ায় টানা তিনদিন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকার পর বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে।
দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী ও পণ্যবাহী গাড়িগুলো চলাচল করছে। ত্রাণবাহী গাড়িগুলো যাচ্ছে বন্যাদুর্গত এলাকায়।
ফেনী নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে আসায় মীরসরাইয়ের করেরহাটসহ কয়েকটি এলাকায় পানি কমে এসেছে। কাটাছরা, দুর্গাপুর, মিঠানালা, ধূম, নাহেরপুর, বাংলাবাজার, মোবারক ঘোনা, কাটাগাং, খৈয়াছরা, মায়ানী, মঘাদিয়া, ইছাখালীতে অনেক বন্যার্ত মানুষ এখনও দুর্ভোগে আছেন। উপজেলার আশ্রয় কেন্দ্রগুলো ছেড়ে যায়নি বানভাসিরা। সড়কজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ।
মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন জানান, বিভিন্ন এলাকায় পানি কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে বন্যা পরবর্তী সংকট ও স্বাস্থ্যসেবা মোকাবেলায় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উপজেলার মস্তাননগর জামেয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসায় সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্যক্যাম্প স্থাপন করা হচ্ছে।
হাটহাজারীর ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় বন্যা পরিস্থিতির ক্রমে উন্নতি হচ্ছে। নাজিরহাট মন্দাকিনী সড়ক, চাঁন গাজী সড়ক, বংশাল সড়ক, ধলই কাজী পাড়া সড়ক, কাটিরহাট-যুগীরহাট সড়ক, ধলই-গুমানমর্দন সড়ক, গুমানমর্দন ডিসি সড়ক, মুৎসুদ্দি পাড়া সড়ক, মাস্টার পাড়া সড়ক, চারিয়া মুরাদ সড়ক, মীরেরহাট মোহাম্মদপুর সড়ক, ইছাপুর চাঁনগাজী সড়ক, মুফতি ফয়েজুল্লা সড়ক, সুবেদার পুকুর পাড়, পুন্ডরিক ধাম সড়কসহ বেশকিছু গ্রামীণ সড়কে এখনও পানি জমে আছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন সিকদার জানান, হালদার বেড়িবাঁধে ভাঙনে হাটহাজারীতে বন্যায় ৩ হাজার ২শ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে কাপ্তাই বাঁধ খুলে দেওয়ার পর বড় কোনো প্রভাব পড়েনি রাঙ্গুনিয়াসহ ভাটি এলাকায়। গত ৬ দিন কয়েক ফুট পানির নিচে থাকার পর রোববার (২৫ আগস্ট) থেকে পানি নামতে শুরু করেছে গুমাইবিল থেকে। রাঙ্গুনিয়ার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার জানান, বিলে বন্যার পানি সহনশীল জাতের আমন চারার আবাদ হওয়ায় ফসল খুব বেশি নষ্ট হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদুল হাসান জানান, কাপ্তাই বাঁধের স্পিলওয়ে খুলে দেওয়ার প্রভাব উপজেলায় পড়েনি। তবে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের নজরদারি রয়েছে।
বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ফটিকছড়িতে। উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী তন্ময় নাথ জানান, ৮১টি সড়ক সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ১৮টি সেতু ও ১৩৬টি কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় সড়কে এখনো পানি রয়েছে। সুন্দরপুর, হারুয়ালছড়ি, নাজিরহাট পৌরসভা, সুয়াবিল, দাঁতমারা ও ভূজপুরে সড়ক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় চলমান বন্যায় চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল নোমান জানান, কিছু ক্ষতি চিহ্নিত করা গেলেও সম্পূর্ণভাবে পানি নেমে গেলে ক্ষতির সঠিক পরিমাণ জানা যাবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, প্রত্যেক এলাকার ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করা হচ্ছে। নিজ নিজ বিভাগের কর্মকর্তারা তালিকা করছেন। পানি পুরোপুরি নেমে গেলে এসব এলাকা সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।